লিউকেমিয়া
ভ্রুণ অবস্থায় যকৃৎ এবং প্লীহায় লোহিত রক্ত কণিকা উৎপন্ন হয়। শিশুদের জন্মের পর থেকে লোহিত কণিকা উৎপন্ন শুরু হয়। লাল অস্থিমজ্জা হতে এই কণিকা উৎপন্ন হয়। এগুলো প্রধানত দেহে O, সরবরাহের কাজ করে। যদি কোনো কারণে অস্বাভাবিক শ্বেত কণিকার বৃদ্ধি ঘটে তাহলে রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। তখন অস্থিমজ্জা অত্যধিক হারে শ্বেত রক্তকোষ উৎপাদন করার কারণে পরোক্ষভাবে লোহিত রক্তকোষ এবং অণুচক্রিকার উৎপাদন কমে যেতে পারে। লিউকেমিয়াকে রক্তের ক্যান্সার বলা হলেও এটি আসলে রক্ত উৎপাদন-ব্যবস্থার অস্বাভাবিকতাজনিত একটি রোগ এবং এতে প্রধানত যে অঙ্গটি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তা হলো অস্থিমজ্জা। লোহিত রক্তকোষের অভাবে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়, যার ফলে রোগী দুর্বল বোধ করে, ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং শ্বাসকষ্ট হয়। অণুচক্রিকার অভাবে রক্ত জমাট বাঁধতে না পারার কারণে দাঁতের গোড়া ও নাকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক সময় কোনো আঘাত ছাড়াই অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হয়। একই কারণে দেহত্বকে ছোট ছোট লাল বর্ণের দাগ দেখা দিতে পারে এবং পায়ের গিঁটে ব্যথা হয়ে ফুলে উঠতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শ্রেণিবিভাগ অনুসারে অর্ধশতাধিক প্রকারের লিউকেমিয়া আছে, যার বেশির ভাগেই শ্বেত রক্তকোষের আধিক্য দেখা যায়। কিন্তু অধিক হারে শ্বেত রক্তকোষ উৎপন্ন হলেও সেগুলো আসলে ক্যান্সার কোষ এবং শ্বেতকোষের স্বাভাবিক কাজ, রোগ প্রতিরোধে অক্ষম। তাই লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি সহজেই বিভিন্ন রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হন। রোগ প্রতিরোধ-ব্যবস্থার অস্বাভাবিকতার কারণে দীর্ঘমেয়াদি জ্বর হতে পারে এবং লসিকা গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। এভাবে রক্তের তিন ধরনের কোষের প্রায় প্রতিটিরই স্বাভাবিক কাজ ঠিকমতো না করতে পারা এ রোগের লক্ষণ। তবে লিউকেমিয়ার প্রকারভেদ অনুসারে লক্ষণের তারতম্য হতে পারে।
চিকিৎসা: বর্তমানে প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগ নির্ণয় করা গেলে এবং রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারলে এ রোগ নিরাময় করা সম্ভব। সাধারণত ক্যান্সার কেমোথেরাপি এবং অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়, অবশ্য প্রকারভেদ অনুসারে চিকিৎসার ভিন্নতা রয়েছে। একসময় লিউকেমিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। তবে বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব এবং দেশের বহু সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ক্যান্সার কেমোথেরাপির ব্যবস্থা আছে।
Comments
Post a Comment